শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন বাগপাচরা গ্রামে (বর্তমানে সোনাইমুড়ী উপজেলা) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আযহার মিয়া এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ জুলেখা খাতুন।
শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে একজন নাবিক হিসেবে যোগদান করেন। ২৫ মার্চের বর্বরোচিত হামলার পর তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানির নির্দেশে ভারত থেকে প্রাপ্ত নৌ জাহাজ বি.এন.এস পলাশে যোগ দেন। পরবর্তীতে বি.এন.এস পদ্মা নৌ-জাহারের ইঞ্জিন রুম আর্টি ফিশার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এ জাহাজেই দায়িত্ব পালন কালে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শাহাদাৎ বরণ করেন।
তাঁর অসম সাহসিকতা, দক্ষতা, রণচাতুর্য সর্বোপরি স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ওবায়েদ উল্যা
ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ওবায়েদ উল্যা ১৮৭৬ সনে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন সল্লাঘটিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি রমজান আলী এবং মাতার নাম জামিলা খাতুন। তিনি ১৯১০ সালে বরিশলাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, শিবপুর মাইনিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বি.এসসি ডিগ্রী লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে প্রথমে তিনি ভূপালে ভারতের সুপ্রসিদ্ধ শাতয়ালেস কোম্পানীতে চাকুরী নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। একজন খনিজ প্রকৌশলী হিসেবে সমগ্র ভারতবর্ষে তার সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ পাক তার এমন প্রতিভা দিয়েছিলেন যে, তিনি মাটি পরীক্ষা করে বলে দিতে পারতেন কোথায় আছে কিসের খনি। তাঁর সাফল্যের সংবাদ শুনে ১৯১৯ সালের দিকে আফগান বাদশাহ আমানুল্লাহ তাঁকে উচ্চতর বেতন দিয়ে তার দেশে নিয়ে যান। সে সেদেশে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বাদশাহ আমানুল্লাহ সিংহাসন ত্যাগ করলে ১৯২৯ সালে ওবায়েদ উল্যাহ নোয়াখালী চলে আসেন।
নোয়াখালী ফিরে তিনি মেঘনার করাল গ্রাস থেকে মোঘল আমলের তৈরি নোয়াখালী পুরাতন শহরের স্থাপত্য নিদর্শন ও সরকারী বাস ভবন ইত্যাদি রক্ষার জন্য তৎকালীন বৃটিশ শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট একটি পরিকল্পনা দাখিল করেন। কিন্তূ ভারতের কেন্দ্রীয় প্রধান প্রকৌশলী স্যার এডওয়েস তাঁর প্রস্তাব বিবেচনা না করায় তিনি শূন্য হাতে শিমলা থেকে দেশে ফিরে আসেন। স্বীয় কর্ম পরিকল্পনার উপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে প্রায় ৫ সহশ্রাধিক শ্রমিককে মাটি ভরাটের কাজে লাগিয়ে ১৯৩০ সালের ৩০শে জানুয়ারি নদীতে বাঁধ দিয়ে এক অবিশ্বাস্য ঘটনার অবতারণা করেন, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মানুষের ইচ্ছে এবং ত্যাগের দ্বারা যে অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব তা দেখালেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ওবায়েদ উল্যা। অবশ্য পরবর্তিতে তাঁর সেই বাঁধ প্রভাবশালী কুচক্রী মহল কেটে ফেললে নদীর উত্তাল স্রোতে শেষ পর্যন্ত নোয়াখালী শহর নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে ১৯৪৯ সালে মাইজদীতে স্থানান্তরিত হয়। তবুও জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের চতুর্দিকে নির্মিত বর্তমান যে বেড়ি বাঁধের উপকারিতা পাওয়া যাচ্ছে তা মরহুম ওবায়েদ উল্যা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবেরই অবদান।
বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার আশীর্বাদ ক্ষণজন্মা এ মহাপুরতষ নোয়াখালী পৌর সভার চেয়ারম্যান এবং জিলা বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬০ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
আবদুল মালেক উকিল
নোয়াখালী জেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞ আইনজীবী মরহুম আবদুল মালেক উকিল নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ মুন্সী চান্দ মিয়া ও মায়ের নাম মরহুমা নুরুননেছা।
১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বিএ ও এম এ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে এল এল বি ডিগ্রী লাভ করেন। কর্ম জীবনের শুরুতেই তিনি ১৯৫২ সালে নোয়াখালী বারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন এবং পরে ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে বাংলা, বিহার ও আসামে প্রচারকার্যে অংশ নেন। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের সাথে ছিলেন ঘনিষ্ঠ। আন্দোলনের কারণে তাঁকে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ এবং ১৯৫২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি কারা জীবন যাপন করতে হয়। তিনি ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের নোয়াখালী উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে পূনরায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে সর্বসম্মতিত্রুমে গণপরিষদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তৃতীয়বারের মত প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন। পকিস্তানের লাহোর শহরে গুলবার্গে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলনে জনাব মালেক উকিল সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি প্রথম উপস্থাপন করেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মরহুম আবদুল মালেক উকিল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য আওয়ামী সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশ সফর করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে জনাব মালেক উকিল ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সদস্য হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীন দেশের প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি স্বাস্থ্য্ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীএবং পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি দলের কান্ডারী হয়ে দলকে সুগঠিত করেন এবং ১৯৭৮ সালে তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার বদরুল হায়দার চৌধুরীঃ
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার বদরুল হায়দার চৌধুরী নোয়াখালী সুধারাম থানাধীন নুরসোনাপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মরহুম খান বাহাদুর মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী। তিনি ১৯৪৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.পাশ করার পর ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী নেন।
১৯৫৫ সালে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারী পাশ করে ঢাকা হাইকোর্টের বারে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারক হন এবং ১৯৭৮ সালে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৯০ সালে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
দেশের কৃতি সন্তান সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে ৭৪ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
রফিক উল্যা চৌধুরী
রফিক উল্যা চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ৮ মে নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন পাঁচগাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাজী ফজলুর রহমান এবং মাতার নাম জাহিদা খাতুন। ১৯৫৮ সালে অনার্সসহ ইতিহাস বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য হতে উচ্চতর প্রশাসন বিভাগে এম.এস ডিগ্রী লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৬০ সালে নেত্রকোনার মহকুমা হাকিম, ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং অতিরিক্ত জেলা জজ এর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সচিব, পর্যটন সংস্থার চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ স্টাফ কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৪-১৯৫৯ পর্যমত তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর একজন ঘনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ার কারণে তিনি তাঁর একান্ত সচিব হওয়ার বিরল সুযোগ লাভ করেছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী এ.এন.এম. মুনীর চৌধুরী
শহীদ বুদ্ধিজীবী এ.এন.এম.মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিধর ভাস্কর এবং দক্ষ কারুকার। তিনি ১৯২৫ সালের ২৭শে নভেম্বর ঢাকা জিলার মানিকগঞ্জে পিতার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন গোপাইরবাগ গ্রামে।
তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি.এ অনার্স এবং ১৯৪৭ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি প্রথমে জগন্নাথ কলেজে এবং পরে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে অধ্যাপনার দায়িত্বে যোগদান করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য আমেরিকায় যান এবং সেখানকার হাভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৫৮ সাথে ভাষাতত্ত্বে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ইংরেজী ও বাংলা সাহিত্যের জন্য বিশেষ অবদান রাখেন। ১৯৬২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে "রিডার'' পদে অধিষ্ঠিত করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২), চিঠি (১৯৬৬) দন্ড কারণ্য (১৯৫৬), পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯), অনুবাদ নাটকঃ কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৭), রূপার কৌটা (১৬৯), মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০)। প্রবন্ধ গ্রন্থঃ ড্রাইডেন ও ডি এল রায় (১৯৬৩), মীর মানস (১৯৬৫) তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯), বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০) অন্যতম। তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৬৫ সালে দাউদ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলা মুদ্রাক্ষর লিপির উদ্ভাবক। বাংলা একাডেমী এ টাইপ রাইটারের নামকরণ করেছেন অপটিমা মুনীর।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুনীর চৌধুরীকে ঘাতক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এবং তিনি তাদের হাতে শহীদ হন।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক
যে বীর বাঙ্গালির মহান আত্মত্যাগের ফলে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং যা শেষ পর্যন্ত মহা মুক্তিযুদ্ধের রূপ নেয় তাদের মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক অন্যতম। সার্জেন্ট জহুরুল হক বাঙ্গালির স্বাধীনতার প্রতীক, বীরত্বের প্রতীক, মহান ত্যাগের প্রতীক।
পাকিস্তানী শাসকচক্ষু এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার চিরতরে নস্যাৎ করার জন্য বাঙ্গালির নিজস্ব সত্ত্বাকে ধ্বংস করার জন্য কতিপয় নেতৃসহানীয় বাঙ্গালির বিরুদ্ধে এনেছিল একটি যড়যন্ত্র মামলা -ইতিহাসে তা কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ৬ দফা এবং ১১ দফা আদায়ের মাধ্যমে বাংলার বুকে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিটি বাঙ্গালি যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল এবং প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আনা হয় এ মামলা। এ মামলা ছিল তখন বাঙ্গালি জাতি সত্ত্বার প্রতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। এ ষড়যন্ত্র মামলা যদি পাকিস্তানীদের অনুকূলে যেত তাহলে আজ বাঙ্গালি জাতির জীবন প্রবাহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো। বিশ্বের মানচিত্রে হয়তো বাংলাদেশ নামে কোন দেশের অস্তিত্ব থাকতো না। কিন্তু বাংলার মানুষ সেটি হতে দেয়নি। পাকিস্তানী কারাগারে আটক থেকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক আপোষ করেননি, বরং পাক বাহিনীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে বুক পেতে বুলেট বরণ করেছেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানী সৈন্যের গুলিতে শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সার্জেন্ট জহুরুল হক।
সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন সোনাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন একজন কৃতি ক্রীড়াবিদ ও চিত্র শিল্পী। তাঁর অঙ্কিত অনেক শিল্পকর্ম ঢাকায় জাতীয় যাদুঘরে মর্যাদার সাথে সংরক্ষিত আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে "সার্জেন্ট জহুরুল হক হল" রাখা হয়েছে।